University and Country Selection



This document is featured on website: http://bit.ly/18HkUIp

কানাডায় উচ্চ শিক্ষা
by Dr. Enayetur Raheem
Assistant Professor of Environmental Statistics

Department of Natural and Applied Sciences
University of Wisconsin--Green Bay 2420 Nicolet Drive, Green Bay, WI 54311, USA


সর্বশেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০০৭ [কিছু নিয়ম পরিবর্তন হতে পারে, তাই এখানে একটু দেখে নেবেন http://www.cic.gc.ca/english/study/]

আমাদের দেশে একটা সময় ছিল যখন বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের দূরে কোথাও পড়তে পাঠানোর কথা চিন্তাই করতে পারতেন না। বিশেষ করে নিজেদের জানাশোনার গন্ডির বাইরে খুব কম অভিভাবকই তাদের সন্তানকে নিশ্চিন্তে চালিত হওয়ার সুযোগ দিতেন। তবে দিন পালটেছে। এখন উত্তরবঙ্গের মানুষও ঢাকায় পড়তে আসে। এই বিরাট পরিবর্তনের সাথে ইদানিং বিদেশে পড়তে আসার একটা প্রবণতা বেশ লক্ষণীয়। বিদেশে স্নাতক বা স্নাতোকত্তোর স্তরে পড়াশুনার জন্য এখন অনেকেই আসার চেষ্টা করছেন। স্নাতক স্তরে লেখাপড়া উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে উত্তর আমেরিকাতে অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। সাধারণ পরিবারের ছাত্রদের পক্ষে এর খরচ যোগান দেয়া এক কখায় অসম্ভব। কিন্তু স্নাতোকোত্তর স্তরে পড়াশুনার জন্য এখানে ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট, স্কলারশীপ ইত্যাদির ব্যবস্থা রয়েছে

আমার চার বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আজ কানাডার শিক্ষা ব্যবস্থা, এখানে উচ্চশিক্ষার (মাস্টার্স, পিএইচডি) সুযোগ, কিভাবে ভর্তি হওয়া যায়, ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করব। যদিও কানাডার সব ইউনিভার্সিটির পরিপূর্ণ ওয়েবসাইট রয়েছে এবং সেখানে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ভর্তির রিকোয়ারমেন্টস পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে, বিষয়ে আমার নিজের অভিজ্ঞতার সবার সাথে শেয়ার করতে চাই। প্রথমতঃ নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝতে পেরেছি যে বাংলাদেশে অবস্থান করে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে উত্তর আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থার যে ফারাক তা সত্যিকার অর্থে অনুধাবন করা সহজ নয়। উচ্চশিক্ষার জন্য নর্থ আমেরিকা নিঃসন্দেহে সবার প্রথম পছন্দ। আমার মনে হয় এর কারণ মূলতঃ সাইকোলজিক্যাল। আমাদের অনেকেরই একটা ধারণা রয়েছে যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় নর্থ আমেরিকানরাই এগিয়ে আছে; আর তাই আমাদের সবার পছন্দের তালিকায় আমেরিকা বা কানাডাই রয়েছে সবার উপরে। এই ধারণা যে একেবারে অমূলক নয় তার ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না। তবে কানাডায় উচ্চশিক্ষা করতে যারা ইচ্ছুক তাদের জন্য এই লেখাটি কাজে আসবে বলে মনে করি

এবার আসা যাক কানাডায় উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়

  • একাডেমিক সেশন লেভেল

প্রথমেই এই দিক নিয়ে আলোচনা করা ভাল। উচ্চশিক্ষাকে এরা মূলত দুটো লেভেল বা স্তরে ভাগ করেছে- আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেল (বা স্নাতক) এবং গ্র্যাজুয়েট লেভেল (বা স্নাতোকোত্তা) সংক্ষেপে এরা বলে আন্ডারগ্র্যাড এবং গ্র্যাড। সে অর্থে আন্ডারগ্র্যাড হল ইউনিভার্সিটির ১ম বর্ষ থেকে ৪র্থ বর্ষ পর্যন্ত। আর গ্র্যাড মানে হল মাস্টার্স বা পিএইচডি। ভাবতে অবাক হলেও সত্যি যে, এখানে অধিকাংশ স্কুলে (এরা ইউনিভার্সিটিকে স্কুলও বলে) বছরে মাত্র মাস ক্লাস হয়। বাকী মাসই কোন ক্লাস হয়না। তবে অনেক ইউনিভার্সিটি রয়েছে যেখানে সারাবছরই কোন না কোন প্রোগ্রাম চালু আছে। এখানে একাডেমিক সেশন শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাসে এবং প্রতিটি সেমিস্টার/সেশন হয় মাসের। মুলতঃ তিনটি সেমিস্টার রয়েছে-- ফল (Fall) সেমিস্টার সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর, উইন্টার (Winter) জানুয়ারী থেকে এপ্রিল এবং স্প্রীং (Spring) বা গ্রীস্মকালীন (Summer) সেমিস্টার চলে মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত। যেহেতু ফল সেমিস্টার একাডেমিক ইয়ার শুরু হয় সেহেতু ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভর্তির সুযোগ এই সেমিস্টারেই সবচেয়ে বেশী। কিছু ইউনিভার্সিটি রয়েছে যারা তিন সেমিস্টারেই স্টুডেন্ট ভর্তি করে আবার অধিকাংশ ইউনিভার্সিটিই কেবল ফল সেশনে ভর্তি করে। তবে ফাইন্যন্সিয়াল ডিসিশন ফল সেশনে নেয়া হয় বলে স্কলারশীপ এবং অন্যান্য বৃত্তির সুযোগ পেতে হলে এই সেশনের জন্যই বাংলাদেশে থেকে আ্যপ্লাই করা ভাল

  • ইউনিভার্সিটি নির্বাচন
কানাডার অধিকাংশ ইউনিভার্সিটিই পাবলিক ইউনিভার্সিটি যেমনটা আমাদের দেশের ঢাকা ইউনিভার্সিটি, ইঞ্জিনয়ারিং ইউনিভার্সিটি। অর্থা ইউনিভার্সিটি চলে জনগনের টাকায়। তাই বলে টিউশন ফি আমাদের দেশের মত নয়। বাংলাদেশে পাবলিক ইউনিভার্সিটির মাসিক টিউশন ফি যেখানে নামেমাত্র, এখানে টিউশন ফি' কারণেই স্টুডেন্টদের একটা বড় অংশ ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে না। এদেশে ইউনিভার্সিটিগুলো নিজেরাই তাদের টিউশন ফি নির্ধারণ করে। কোন কোন ইনউনিভার্সিটিতে পিএইচডি লেভেলে টিউশন ফি দিতে হয়না। আবার কিছু কিছু ইউনিভার্সিটিতে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে ৮০% এর উপরে নম্বর থাকলে মাস্টার্স লেভেলেও টিউশন ফি মাফ করে দেয়। তবে বিদেশী ছাত্রদের জন্য এই সুবিধাগুলি ততটা দেয়া হয়না। যারা গ্রাজুয়েট লেভেলে (মাস্টার্স পিএইচডি) পড়তে চান তাদের এই খরচ নিয়ে চিন্তা না করলেও চলে কারণ এখানে গ্রাজুয়েট স্টাডির খরচ ইউনিভার্সিটিগুলোই বহন করে। সাধারণত টিচিং আ্যসিস্টান্টশীপ বা রিসার্চ আ্যসিস্টান্টশীপ এর মাধ্যমে এই টাকা স্টুডেন্টরা পেয়ে থাকে

বাংলাদেশ থেকে আ্যপ্লাই করার সময় অনেকেরই ইচ্ছা থাকে সবচেয়ে নামকরা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার। তবে একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে যত নামকরা ইউনিভার্সিটি তত কঠিন সেখানকার পড়াশুনা এবং ততোধিক প্রতিযোগীতামূলক সেখানকার ভর্তির প্রক্রিয়া আমার মতে বাংলাদেশ থেকে এখানে আসাটাই একটা কঠিন বাধা। সেই বাধা অতিক্রম করা সব ছাত্রদের জন্য সহজ নয়। যারা অত্যন্ত মেধাবী তাদের কথা বাদ দেই। অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের উচিত যেকোন ভাবেই হোক ফান্ড সহ এ্যাডমিশন যোগাড় করা। তারপর মাস্টার্স করে অন্য নামকরা ইউনিভার্সিটিতে চলে যাওয়া যেতে পারে। আর তাই খুব নামকরা ইউনিভার্সিটির সাথে সাথে অপেক্ষাকৃত কম নামকরা ইউনিভার্সিটিতেও আ্যপ্লাই করা উচিৎ। ইউনিভার্সিটি নির্বাচন করা নির্ভর করে আপনার বিষয়ে উপর। যেমন, কেউ হয়তো ম্যাথমেটিক্স বা স্ট্যাটিসটিকস সম্পর্কে ভাল জানে, কিন্তু ইলেক্ট্রনিক্স ভাল জানেনা। তাই সবচেয়ে ভাল হয় যদি আপনার সাবজেক্টের পরিচিত কেউ (যেমন সিনিয়র ভাইবোন) পাওয়া যায়। তাদের সাথে যোগাযোগ করলে সেই ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় কিছু কিছু সাবজেক্টে মাস্টার্স বা পিএইচডি করার জন্য ডিপার্টমেন্টের প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করার দরকার হয়না। সেখানে ডিপার্টমেন্টই নির্ধারণ করে কাকে ফান্ড দেয়া হবে এবং তা কিভাবে। আবার অনেক ডিপার্টমেন্ট আছে, বিশেষত প্রকৌশল বিভাগ গুলো, যেখানে প্রফেসরই ফান্ড দেয়। সেসব ক্ষেত্রে পরিচিত কারো সাথে যোগাযোগ করে প্রফেসরদের ফান্ডের অবস্থা সম্পর্কে আগেভাগে জানতে পারলে সে মোতাবেক আ্যপ্লাই করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়

  • ভর্তির জন্য যা যা প্রয়োজন

মাস্টার্স লেভেলে ভর্তির জন্য বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের ১৬ বছরের শিক্ষা অভিজ্ঞতা দরকার। সে অর্থে ইন্টারমিডিয়েটের পরে চার বছর মেয়াদী অনার্স থাকাই যথেষ্ট। অনেক ইউনিভার্সিটিতেই ল্যাংগুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি পরীক্ষা যেমন টোফল / আই এল টি এস বাধ্যতামূলক। তবে ক্ষেত্রবিশেষে নিয়ম তারা শিথিল করে থাকে। কানাডায় দুই একটি বাদে কোন ইউনিভার্সিটিতেই জি আর স্কোর প্রয়োজন হয়না অর্থা জি আর ' স্কোর তারা বিবেচনা করেনা

আর একটি দরকারী জিনিস হল রেকমেন্ডশন লেটার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এই সব রেকমেন্ডশন লেটার পড়ে। রেকমেন্ডশন লেটার হল আপনার একাডেমিক এবং গবেষণা করার যোগ্যতা মূল্যায়ন সম্পর্কিত একটি পত্র যা সাধারণত আপনার কাজের সাথে পরিচিত প্রফেসর দিতে পারেন। এর জন্য ইউনিভার্সিটিগুলোর নিজস্ব ফরম রয়েছে। তবে তার সাথে প্রফেসরদের লেটারহেড- আলাদা করে একটি চিঠি পাঠানো ভাল। সাধারণত -৩টি লেটার দরকার হয়। ভাল রেকমেন্ডশন লেটার না হলে ভর্তির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে

অনেক সময় আ্যপ্লিকেশন প্যাকেজে স্টেটমেন্ড অব ইন্টারেস্ট বা প্ল্যান অব স্টাডি লিখতে হয়। এটি মাস্টার্স লেভেল-এর জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও পি এইচ ডি' জন্য খুবই দরকারী। আপনি মাস্টার্স আ্যপ্লিক্যান্ট হলে তারা দেখতে চায় আপনার রিসার্চ ইন্টারেস্ট কোনদিকে। কোন স্পেসিফিক একটা এরিয়াতে ফোকাস না করে কয়েকটি এরিয়াতে ইন্টারেস্ট দেখানো আমার মনে হয় ভাল তবে ডিপার্টমেন্টের প্রফেসরদের ওয়েবসাইট দেখে সে মোতাবেক একটা প্ল্যান তৈরী করা উচি

আ্যপ্লাই করার শেষ সময় ইউনিভার্সিটিভেদে আলাদা হয়। তবে সাধারণত ফল সেশনের জন্য সেই বছরের জানুয়ারী বা কোন কোন ক্ষেত্রে আগের বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সব ডকুমেন্ট নির্ধারিত ঠিকানায় পাঠাতে হয়। যেমন আপনি যদি ২০১৩ এর ফল ভর্তি হতে চান তাহলে ২০১২ এর জানুয়ারী বা বছরের (২০১২) ডিসেম্বর নাগাদ আপনার আ্যপ্লিকেশন ফরমস, ফি, ল্যাংগুয়েজ স্কোর, রেকমেন্ডেশন লেটার ইত্যাদি পাঠাতে হবে। সাধারণত টোফল / আই এল টি এস এর স্কোর পেতে থেকে দেড়মাস সময় লাগে। তাই আমার ব্যক্তিগত মত হল নভেম্বরের শেষ অথবা ডিসেম্বরের শুরুর মধ্যে অবশ্যই এসব পরীক্ষা দিয়ে ফেলা উচি

অনেক সময় পোস্টাল ডেলিভারির ভুলের কারণে দরকারী কাগজপত্র সময়মত পৌঁছায় না বা হারিয়ে যায়। তাই আ্যপ্লাই করার পর ইউনিভার্সিটির সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হতে হবে যে তারা আপনার সম্পূর্ণ আ্যপ্লিকেশন হাতে পেয়েছে। তারা কিন্তু নিজেরা আপনাকে জানাবে না যে আপনার টোফল / আই এল টি এস স্কোর তারা পায়নি। সেক্ষেত্রে আপনার অসম্পূর্ণ আ্যপ্লিকেশন তারা বিবেচনা করবে না। অনেক সময় কাগজপত্র দেরীতে পৌঁছুলে তারা দেরীতেই আপনার ফাইল প্রসেস করবে। তবে সেক্ষেত্রে স্কলারশীপ বা অন্যান্য ফান্ডিং পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবেনা অথবা কমে যায় আর স্কলারশীপ না দিতে পারলে আপনাকে ওরা আ্যডমিশনও দেবেনা তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়

  • কাজের সুযোগ

আপনার ভর্তির শর্ত মোতাবেক সাধারণত ক্যাম্পাসের ভিতরে কাজ করার অনুমতি থাকবে। তবে কিছুদিন আগে কানাডার সরকার বিদেশী ছাত্রদের পড়ালেখার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। তবে আপনি কানাডায় এসেই ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করতে পারবেন না। কমপক্ষে ছয় মাস পরে আপনি এই ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনার একাডেমিক ফলাফল ভাল থাকলে সরকার ওয়ার্ক পারমিট প্রদান করবে

  • শেষ কথা
কানাডায় পড়াশুনার মান ভাল হলেও এখানকার সবচেয়ে খারাপ দিক হল এর জলবায়ু। শীতকালে তাপমাত্রা প্রদেশভেদে মাইনাস ৫০ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়। আবার গরমকালেও বেশ গরম পড়ে। বিদেশী ছাত্রদের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত কানাডায় থেকে যায়। জলবায়ু যাই হোক, কানাডায় লিভিং সত্যিই নির্ঝঞ্জাট। ভাল এখানকার মানুষ, এখানকার পরিবেশ। নিরাপদ, সুন্দর জীবন যাপনের জন্যও কানাডা হতে পারে আপনার পরবর্তী হোম। আপনি তেমন কিছু চাইলে দেশ থেকেই তার প্রস্ততি নিয়ে আসতে পারেন
Share on Google Plus

About Jessica Hornberger

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment