ভূমিকাঃ
আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে কথিত আল্লামা শফি’র নেতৃত্বে একটি লং মার্চ ঢাকা অভিমুখে আসছে এই শনিবার ৬-ই এপ্রিল ২০১৩, প্রিয় পাঠকেরা আজকে আপনাদের বলব এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের কাহিনী। যা শুনলে আপনারা শিউরে উঠবেন। আপনারা বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যাবেন।
[লন্ডন শাখার হেজাফিত ইসলামী কর্মী হামিদীকে পুলিশ অনৈতিক কাজের জন্য গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে]
এই আন্দোলন আসলে হেফাজতী ইসলাম যে করবে তার কথা ছিলো না শুরুতে। জামাতের ইমেজ সারা বাংলাদেশে খারাপ থাকায় জামাত হন্য হয়ে একটা চ্যানেল খুজঁছিলো যে অন্য কোনোভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো যায় কিনা দেশের পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে। এইসময় জামাতের ভাগ্য ভালোই বলতে হয়। কেননা শাহবাগ আন্দলোনের সময়। শাহবাগে ২২ শে ফেব্রুয়ারী শেখ নূরে আলম হামিদী নামক একজন যিনি বৃটিশ নাগরিক তিনি শাহবাগে এসেছিলেন তার হ্যান্ডি ক্যামেরা নিয়ে শাহবাগের আন্দোলন ভিডিও করতে। সে সময় হামিদী খুঁযে খুঁজে সেখানকার তরুনদের সিগেরেট খাওয়া, পথে বসে জাগ্রত নারীদের গান গাওয়া ইত্যাদি রেকর্ড করছিলেন। ঠিক সে সময় সেখানে অবস্থানরত তরুনদের সন্দেহ হয় এবং তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় সে এখানে কি করছে তখন হামিদী ঠিক ঠাক কিছু বলতে পারেনি। পরে তার সাথে থাকা ক্যামেরা, ভিডিও ডিভাইস ইত্যাদি ঘেটে দেখা যায় যে হামিদী সেখানে মেয়েদের শরীরের নানা স্থান দূর থেকে ভিডিও করেছেন এবং ক্যামেরাতেও নানান ছবি তুলেছেন যেমন একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে একটি ছেলে সিগেরেট খাচ্ছে, একটি মেয়ে স্লোগান দিতে গিয়ে তার ওড়না পড়ে গেছে কিংবা একটি মেয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তার বান্ধবীর কাঁধে। ঠিক সে সময়ে ক্লান্ত ঐ বোনের অসতর্ক মুহুর্তের নানান স্থানের ছবি তুলে হামিদী এগুলো দিয়ে প্রচার চালাতে চেয়েছিলো।
কে এই শেখ নূরে আলম হামিদীঃ
এই হামিদী একজন ব্রিটিশ নাগরিক। ১৯৯৮ সালের
দিকে আওয়ামীলীগ আমলে এই হামিদীর নামে জঙ্গি তৎপরতা বিষয়ে এলার্ট জারি হয়
এবং পুলিশ হন্য হয়ে তাকে খুঁজতে থাকে। ১৯৯৯ সালে এই ব্যাক্তি পালিয়ে
প্রথমে ভারত তারপর সেখান থেকে তার আরেক ভাইয়ের সাহায্যে যুক্তরাজ্যে যায়।
হামদীর গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। তার বাবা শেখ খলিলুর রহমান
হামিদী বরুনার পীর। হামিদী বরুনা মাদ্রাসায় একসময় শিক্ষকতা করত। হামিদী
লন্ডনে মূলত হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি হিসেবেই কাজ করে যাচ্ছিলো। তাদের
এই মাদ্রাসা পূর্ব লন্ডনের প্লাস্টোতে অবস্থিত। লন্ডনে এই হেফাজতী ইসলাম
তাদের নাম ধারন করে আঞ্জুমানে হেফাজতী ইসলাম। প্রতি বছর লন্ডনে পহেলা
এপ্রিলের মেলাতে এই হেফাজতী ইস্লামের কর্মীরা লন্ডনের বিভিন্ন রাস্তায়
দাঁড়িয়ে লিফ্লেট দিত যাতে মানুষ মেলায় না যায়। এটা নাকি ইসলাম বিরোধী
কাজ। হেফাজতে ইসলামের অধীনে যত মাদ্রাসা আছে সেগুলোর জন্য এই হামিদী প্রতি
বছর রমজানে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বা উৎসবের আগে টিভিতে, রেডিওতে
এবং লন্ডনের বিভিন্ন সোর্স থেকে পাউন্ড সংগ্রহ করত।
শাহবাগের তরুনেরা হামিদীকে তার এইসব ঘৃণ্য
কর্মকান্ড সহ হাতে নাতে ধরে গণপিটুনী দেবার চেষ্টা করলে সেখানকার কিছু তরুন
তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে এবং হামিদীর কাছ থেকে উদ্ধার করে
মহামূল্যবান কিছু ডকুমেন্টস। এইদিকে হামিদীও স্বীকার করে অনেক কিছু। আর
এইসব কারনেই হেফাজতী ইসলাম নামে জঙ্গী দলটি ধীরে ধীরে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে
প্রতিশোধের নেশায়।
[উপরের ছবিতে জঙ্গী নূরে আলম হামিদীকে দেখা যাচ্ছে]
ডেটলাইন ২৮ শে ফেব্রুয়ারীঃ
সাঈদীর রায় শুনবার পর থেকেই সালাউদ্দিন কাদের
চৌধুরীর পরিবার বার বার চেষ্টা চালাতে থাকে বি এন পি’র হাই কমান্ডের এম এক
আনোয়ার, আলতাফ হোসেন চৌধুরীর সাথে। বি এন পি’র হাই কমান্ড অনেক আগের
থেকেই সাকার উপর নাখোশ, এইদিকে সাদেক হোসেন খোকার একটা গ্রুপ সাকার ব্যাপার
বি এন পি’তে পুরোপুরি অফ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। তারেক রহমান সাফ জানিয়ে
দিয়েছে সাকার ব্যাপারে কোনো কথা না বলতে। সব কিছু মিলিয়ে সাকার ছেলে
ফাইয়াজ এবং হুম্মাম প্রাণপণে বি এন পি’র হাই কমান্ডে চেষ্টা করে যাচ্ছিলো
খালেদা যাদে একটাবারের জন্য হলেও সাকার নাম উল্লেখ করে স্টেটমেন্ট দেয়।
হুম্মাম শুধু তদবির করার জন্য এম কে আনোয়ারকে ৪৫ লাখ টাকা দেয় তবে আলতাফ
হোসেন এইজন্য কোনো টাকা নেয় নি। এরা দুইজন মিলে যখন খালেদার সাথে দেখা
করতে যান তখন এই বিষয়ে খালেদা শুধু শুনে গিয়েছিলেন, নেতা দুইজন উঠে আসবার
সময় খালেদা আলতাফের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো, সালাউদ্দিনকে একটু ঠাট কমাতে
বলেন। এইভাবে বি এন পিতে তার জায়গা হবে না। সাকার পরিবার এই খবর শুনে
বুঝতে পারে যে বিপদের সময় বি এন পি মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। হাসিনার সাথে
সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের দেখা করতে চাইলেও হাসিনা সরাসরি বলে দেন সাকার
পরিবারের কেউ যেন তার আশে পাশে না আসে কোনোভাবেই।
মার্চের প্রথম সপ্তাহঃ
এমন একটা অবস্থায় সাকার অত্যন্ত কাছের লোক
মাওলানা আবদুর রহমান চৌধুরী সাকার বড় ছেলে ফাইয়াজ কাদেরের কাছে একটা
প্রস্তাব আনে যে হেফাজতী ইসলামের এক নেতাকে সরকার আর শাহবাগের জনতারা খুব
অপদস্থ করেছে, এখন সে জেলে এই ব্যাপারে সাকা যদি হেল্প করতে পারে তাহলে
তারা বসতে পারে। সেই সাথে আব্দুর রহমান আরো জানায় যে হেফাজতী ইসলামী একটা
বড় সড় আন্দোলনে যেতে চায়। এই পুরা আন্দোলোনের জন্য অনেক টাকার দরকার।
সাকার ছেলে ফাইয়াজ আবদুর রহমান চৌধুরীকে সরাসরি কথা দেয় না। সে বলে তারা
বাবার সাথে কথা বলে তাকে জানাবে। হেফাজতী ইসলামের প্রধান আল্লামা শফি অনেক
আগের থেকেই সাকার কৃপায় চট্রগ্রামে টিকে থাকা লোক। এখন সাকাকে এইভাবে
প্রস্তাব করায় তেলে বেগুনে তেঁতে উঠে সাকার স্ত্রী ফারহাত। তারপরেও
পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রনে নেই দেখে পিপড়াও লাথি দেয়, এই হিসেব কষে চুপ
থাকেন তিনি। সাকাকে এই প্রস্তাব দিলে সাকা তার ছোট ছেলে হুম্মামকে এই
ব্যাপারে ইনভলভড হতে বলে এবং জামায়াতে ইসলামীর একটা স্ট্রং লিঙ্ক এখানে
কাযে লাগাতে বলে। কারাগারে এই প্রস্তাব শুনে সাকার প্রথম কথা ছিলো “সোদানির
পুতেরা তাইলে এখন প্রস্তাব নিয়া আসছে?”
ফাইয়াজ আর হুম্মাম জামাতের সেলিম, রফিকুল,শিবিরের নেতা দেলোয়ার, হেফাজতের মাওলানা রুহী, জুনায়েদ আল হাবিবি এবং আব্দুর রহমান চৌধুরীর সাথে একটা গোপন বৈঠকে বসে রাঙ্গুনিয়ার পেনিনসুলা হোটেলে। এই সময় হুম্মাম জামাত শিবিরের তিন নেতা এবং হেফাজতের মাওলানা রুহীকে ও জুনায়েদকে আই ফোন ৫ গিফট করে। এই বৈঠকে আসার আগে ফাইয়াজ তারা চাচা গিয়াসুদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর নাছির ও তার ছেলে শেখ হেলালের সাথে বৈঠক করে নেয়। যদিও গিকার সাথে সাকার পরিবারের অত্যন্ত খারাপ সম্পর্ক, তথাপিও গিকা এই ব্যাপারে আগের সব কথা ভুলে থাকে। কেননা গিকার নামেও এখন তদন্ত চলছে। এইদিকে মীর কাশিমের ছেলে আরমানের সাথেও হুম্মামের একটা ফোন কনফারেন্স হয় এবং আরমান পুরো নিশ্চিত করে যে, সে সাকার পরিবারের যে কোনো সিদ্ধান্তের সাথে আছে। সাকার স্ত্রী যোগাযোগ করে চট্রগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিনের সাথে এবং মহিউদ্দিন সরাসরি কিছু না বল্লেও তাদের পুরা পরিবারের সাথে আছে বলে জানায় এবং চিন্তা করতে মানা করে। সব কিছু নিশ্চিত করার পর হুম্মাম এবং ফাইয়াজের সাথে জামাত-শিবিরের ওই তিন নেতা, হেফাজত ইসলামীর মাওলানা রুহী এবং সাকার নিকট আত্নীয় মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরীর সাথে মিটং হয়। মিটিং চলে প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টার মত এবং সেখানেই মূলত প্ল্যান করা হয় যে এখন সামনে সবকিছু করবে হেফাজতী ইসলামী। পেছনে সাপোর্ট দিবে সাকা-গিকার পরিবার, মীর কাশিমের পরিবার এবং জামাত। বি এন পি’কে বুঝানোর দায়িত্ব থাকে আলতাফ হোসেন চৌধুরী আর মীর নাছিরের উপর। মজার ব্যাপার হোলো এই বৈঠকের শেষে আলাদা ভাবে মাওলানা রুহী হুম্মামের কাছে আর্জেন্ট ভিত্তিতে ৭ লাখ টাকা ধার চায়। হুম্মাম পরের দিন মাওলানা রুহীকে সাত লাখ টাকা দেয় এবং এই টাকা দিতে যায় নুরুল আমীন নামে হুম্মামের এক কাছের লোক।
কি করতে চায় সাকা এবং আল্লামা শফি?
এই লং মার্চের একটা বড় প্ল্যান ছিলো
যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বি এন পি’র সাবেক এম্পি আব্দুল আলীমকে খুন
করা। এতে করে দেশে একটা ভয়াবহ বিশৃংখলা তৈরী হবে। নাজিমুদ্দিন রোডের
জেলখানায় পাগলা ঘন্টি বাজানোর পরিকল্পনাও আছে সেখানকার দুইজন কয়েদীকে খুন
করে। এখানে পরিকল্পনা করা হয় কওমী মাদ্রাসার প্রায় ৫০ জনকে ফেলে দেয়া
হবে আওয়ামীলীগ আর বাম দলের নাম করে। ঢাকাতে তারা অতর্কিতে হামলা করবে গণ
জাগরণ মঞ্চে এবং সেইখানেও তারা হামলা করে কমের পক্ষে ৫ জনকে ফেলে দিবে। এই
দায়িত্ব টা নেয় জামাতের শিবিরের দেলোয়ার। এই একই সাথে হিজবুত তাহরীর
একটা বড় অংশকেও সাকার পক্ষ থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে
তাদের কার্যক্রম চালাবার জন্য। এই টাকার লেনদেন হয়েছে ঢাকার মোহাম্মদপুরের
তাজমহল রোডের এক বাড়িতে। হিজবুত তাহরীর প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি আত্নঘাতী
বোমা হামলায় খুন করবার জন্য এক পায়ে দাঁড়ানো। এই লং মার্চেও এরকম
প্রস্তাব আসলেও সাকার পরিবার এবং বি এন পি’র থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এখনো সময় হয়নি
বলে এই প্রস্তাবে সায় দেয়নি। উলটা তারা ভয় পেয়েছে যে হিজবুত তাহরীর এই
লং মার্চে বড় ধরনের নাশকতা করতে পারে আর পুরো লং মার্চের বারোটা বাজিয়ে
দিতে পারে। হিজবুতীরা যাতে এই ধরনের সহিংস কিছু না করে এই জন্য দফায় দফায়
বৈঠক হয় তাজমহল রোডের ওই বাড়িতে। এদের একটা বৈঠক হয় সাকার মেয়ে
ফারজিনের গুলশানের ক্যাফে বিটার সুইটে।
[মাওলানা রুহী]
আমার দেশ কার্যালয়ে বৈঠকঃ
আমার দেশ কার্যালয় সব সময় পুলিশের নজরদারী
থাকলেও সেখানে গোপনে একটি বৈঠক হয় গত ১১ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টায়। এই
বৈঠকটাতেই মূলত হেফাজতের অন্যতম নীতি নির্ধারক বৈঠক। এই মিটিঙ্গে ফরহাদ
মজাহার, শওকত মাহমুদ, শিবিরের দেলোয়ার, সাকার ছেলে হুম্মাম, মাওলানা
রুহী,আল্লামা সুলতান যওক নদভী,ইনামুল হক কাসেমী, মুফতি হারুন ইজহার চৌধুরী,
মীর কাশেমের ছেলে আরমান এবং আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এই বৈঠকেই
সিদ্ধান্ত হয় অনেক কিছুর। এখানে টাকা পয়সা থেকে শুরু করে কিভাবে কিভাবে
লং মার্চ হবে, কিভাবে নৈরাজ্য চালানো হবে সব ধরনের সিদ্ধান্ত হয়। মীর
কাশেম, জামাত এবং সাকার পরিবার মিলে মোট ৮০ থেকে ৯০ কোটি তাকার একটা রাফ
বাজেট ব্যাবস্থা করবে বলে বলা হয় এবং টাকাটা মাহমুদুর রহমানের মাধ্যমে
ডিস্ট্রিবিউট করা হবে বলে ঘোষনা দিলে বৈঠকে মাওলানা রুহী এবং হারুন ইজহার
বলে এই টাকা সরাসরি যারা যারা আন্দোলন করবে সেইসব দলের নেতাদের আলাদা আলাদা
দিতে হবে। মাওলানা রুহী হেফাজতী ইসলামের জন্য একাই ৪৫ কোটি টাকা দাবী করে
বসে। এই সময় শওকত মাহমুদ মাওলানা রুহীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে মাওলানা
রুহীও পালটা পালটি তর্ক করতে থাকে। এক সময় শওকত মাহমুদ ওই মিটিং ছেড়ে সব
হুজুরদের চলে যেতে বললে একটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন ফরহাদ মজাহার,
আল্লামা নদভী এবং হুম্মাম মিলে পরিস্থিতি ঠান্ডা করেন। মাহমুদুর রহমান এ
সময় চুপচাপ ছিলেন। মাহমুদুর রহমান মাওলানা রুহীকে বলেন যে আমরা দুইবার
আপনাদের বিজ্ঞাপন প্রথম পাতায় দিয়েছি সম্পূর্ন ফ্রি, প্রতিদিন আপনাদের
খবর ছাপাচ্ছি প্রথম পেইজে এইটা ভুলে যাবেন না। মিটিং শেষ হয় ওইদিন রাত ২
টায়। পরে চাইনিজ খাবার আনা হয় রেস্টুরেন্ট থেকে। হুম্মাম এবং আরমান না
খেয়ে চলে যান তাড়া আছে বলে।
[হেফাজতীদের সাথে মাহমুদূর রহমান]
১৫ ই মার্চঃ
[সাকার মেয়ে ফারজিনকে তার ক্যাফে বিটার সুইটের দেখা যাচ্ছে]
সাকার পরিবার থেকে একটা সিদ্ধান্ত হয় যে যারা যারা আন্দোলন করবে তাদেরকে আলাদা ভাবে দল ভিত্তিক টাকা দেয়া হবে। কারন মাহমুদুর রহমানের অফিসে মিটিং থেকেই তারা বুজতে পেরেছে যে হুজুরেরা টাকা না দিলে লড়বে না। এর মধ্যে তার থেকে মাওলানা রুহী ধারের কথা বলে ৭ লাখ টাকাও নিয়েছে হুম্মামের কাছ থেকে। এই একই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মীর কাশেমের পক্ষ থেকেও। এইসময় মীর নাছিরের ছেলে মীর হেলাল বার বার বলে আমার দেশের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে যাতে কিছু করা না হয়। এই নতুন ঝামেলা নিয়ে আবারো সাকার মেয়ে ফারজিনের ক্যাফেতে বৈঠক হয় হুম্মাম, আরমান, মীর হেলাল এবং হেলালের সাথে আসা এক বন্ধু লিটনের। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় মাহমুদুর রহমানকে ৩ কোটি, দারুল মাআরিফ চট্রগ্রামের মহাপরিচালক মাওলানা নদভীকে ২ কোটি, কওমী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানকে ১ কোটি, পটিয়া মাদ্রাসার মহা পরিচালক আব্দুল হালিম বোখারীকে ৫০ লক্ষ এবং হেফাজতী ইসলামকে দেয়া হবে ৪৫ কোটি টাকা এবং জামাত নিজে খরচ করবে বাকী টাকার অংশ তাদের নিজেদের ফান্ড থেকে। সিদ্ধান্ত হয় যে এই পুরা লং মার্চের সব দায় দায়িত্ব থাকবে হেফাজতী ইসলামের কাছে এবং চট্রগ্রাম থেকে পুরো ব্যাক আপ দিবে জামাত-শিবির আর বি এন পি’র সাকা গ্রুপ।
টাকা নিয়ে গ্যাঞ্জাম এবং আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোঃ
কওমী শিক্ষা বোর্ডের ফুফতি কাশেমী এই অর্থ
নিতে রাজী হয় কিন্তু ওইদিকে বেঁকে বসেন বর্ষীয়ান মুফতি আব্দুর রহমান।
তিনি বুঝতে পারেন এখানে হেফাজতীদের অনেক টাকা দেয়া হচ্ছে সেই তুলনায়
তাদেরকে অনেকটা ভিক্ষার মত দেয়া হচ্ছে। একই ব্যাপার বাকীদের সাথেও হয় এবং
এদের সবার সাথে একটা বৈঠক হয় মার্চের ২০ তারিখে সাকার ধানমন্ডির বাসায়।
এখানে কোনোভাবেই এদের কাউকে বুঝানো যায় না। পরে বৈঠক শেষ হলে হুম্মাম,
ফাইয়াজ, মীর হেলাল বুঝতে পারে যে যেখানে এই হুজুরেরা টাকার কাঙ্গাল এবং এত
টাকা যারা জীবনে চোখেও দেখে নাই তারা সরকারী ভয়েই সরে যাচ্ছে। শেষ
পর্যন্ত এই পুরো অংশটাই এই লং মার্চ থেকে সরে দাঁড়াবার অবস্থা হলে জামাত
এই পুরো সিন্ডিকেট কে প্রায় ২৫ কোটি টাকায় রাজি করায়। মাহমুদুর রহমানের
সাথে শেষ পর্যন্ত ৪ কোটি টাকায় রফা হয় পুরো ব্যাপারটাতেই আর হেফাজতীদের
মোট দেয়া হয় ৪৫ কোটি টাকা।
নিজেদের ভেতর অন্তর্দন্দ্ব ও চরম অবিশ্বাস-কলহঃ
এই পুরো ব্যাপারটা যেহেতু কোনো আদর্শিক
আন্দোলন নয় এবং এর সাথে সম্পূর্ণ ভাবেই টাকা পয়সা আর নিজের লাভ জনিত
কারনে সেহেতু খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই পুরো গোষ্ঠীর বিভিন্ন মতাদর্শের দলের
ভেতর শুরু হয় কোন্দল। সেটাও টাকা নিয়ে। হেফাজতী ইসলাম একসাথে এত টাকা
পাবে এইটা কোনোভাবে মানতে পারছে না অন্যান্য দলে গুলো। এবং সে কারনেই আস্তে
আস্তে কয়েকটা দল আস্তে আস্তে বিভক্ত হয়ে পড়লো। হেফাজতের কর্মসূচিতে
যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি দাবিসহ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি
তুলে শেষ মুহূর্তে লংমার্চ থেকে দূরে সরে গেছেন বলে খবর আসে বিভিন্ন স্থান
থেকে। পরে জামাতী ইসলামের মধ্যস্থতায় সম্মিলিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা
বোর্ডের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান আলেম ফকিহুল মিল্লাত আল্লামা
মুফতি আবদুর রহমান, ঐতিহ্যবাহী পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আবদুল
হালিম বোখারী, দারুল মাআরিফ চট্টগ্রামের মহাপরিচালক আল্লামা সুলতান যওক
নদভী মোট ২৫ কোটি টাকায় একটা রফা করে। যার মধ্যে ১০ কোটি টাকাই পাচ্ছে
মুফতি আব্দুর রহমান।
এই ঘটনাতে মুফতী কাশেমী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। কারন এই ডিল করার সময় তাকে জানানো হয়নাই এবং টাকার ব্যাপারেও তাকে কিছু বলা হয়নি। সম্মিলিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কেন্দ্রীয় নেতা ও মুফতি আবদুর রহমানের ঘনিষ্ঠভাজন মুফতি ইনামুল হক কাসেমী এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আলাদা দল নিয়ে লং মার্চের ঘোষনা দিলে পরে এইবার হুম্মাম, জামাতের রফিকের মাধ্যমে আবার একটা সুরাহা হয়। কাশেমীকে দেয়া হয় ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কাশেমি প্রথমে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পটিয়া মাদ্রাসায় কঠোর নির্দেশ জারি করেছিলো কেউ যাতে লং মার্চে না যায়, কোনো ছাত্র-শিক্ষক হেফাজতের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না। এমনকি বিশেষ পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কেউ যাতে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের বাইরে বেরোতে না পারেন। পরে কাশেমী ও আব্দুর রহমানের ভেতর একটা দফা হয় যে তারা এক সাথে মিলে মিশে কাজ করবে।
এদিকে গত ২৯ মার্চ শুক্রবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাতীয় মহাসমাবেশে চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ
মুহাম্মাদ রেজাউল করীম হেফাজতের লংমার্চ কর্মসূচিতে সমর্থন ঘোষণা করলেও
তাতে তাঁর দল ও মুরিদরা অংশ নেবেন না বলে জানা গেছে। সম্প্রতি হেফাজতে
ইসলামের ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক বারিধারা মাদানিয়া মাদ্রাসার
মহাপরিচালক মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করে।
বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কাসেমী সাহেবের সাক্ষাৎ-রহস্য এবং বিভিন্ন সময়ে
উত্থাপিত হেফাজতের নেপথ্যে জামায়াত-শিবিরের প্রভাব ও ষড়যন্ত্র বিষয়ে
হিসাব-নিকাশ শেষে চরমোনাইয়ের পীরের অনুসারীরা শেষ পর্যন্ত লংমার্চে অংশ
নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশ্বস্ত সূত্রে
জানা গেছে, তারা এই লংমার্চে দেওয়া সমর্থন বহাল রাখলেও লংমার্চ
কর্মসূচিতে অংশ নেবে না। দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী
আতাউর রহমানো তার সিদ্ধান্তের কথা জানান যে তারা আর এই আন্দোলনে নেই।
কিভাবে অর্থ দেয়া হোলোঃ
এখানে উল্লেখ্য যে মোট ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকার
একটা মোটামুটি রাফ বাজেট করা হয়েছিলো শুরুতেই। এত টাকার বাজেটের মধ্যে যে
টাকা জামাত নিজে খরচ করবে তার পরিমান প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। জামাত অবশ্য
তাদের এই টাকা শুধু নিজেদের দলের জন্য নয় বরং মুফতি আব্দুরু রহমান, কাশেমী
ইত্যাদি খাতে ব্যয় করবে বলে ঠিক হয়। এর মধ্যে ৪৫ কোটি পাচ্ছে হেফাজতী
ইসলামী এবং ৪ কোটি পাচ্ছে মাহমুদুর রহমান। বাকী বাজেটের মধ্যে মধ্যে ১০
কোটি পায় মুফতি আব্দুর রহমান, ১ কোটি ৭০ পায় মুফতী কাশেমী, কিছু টাকা
টাকা হুম্মাম ডিস্ট্রিবিউট করে বাবু নগর, হাটজাহাজারি সহ আরো কিছু
মাদ্রাসায় ও এতিম খানায় এবং সেখানে কওমী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের নিষেধ
মেনেও যাতে তারা লং মার্চে শরিক হয় এই চেষ্টা চলতে থাকে। মজার ব্যাপার হলো
মহাপরিচালক আব্দুর রহমানের অগোচরে আরো কিছু টাকা দেয়া হয় ইনামুল হক
কাশেমিকে তাদের দফার বাইরে । যাতে করে সে গহিরা, হাটহাজারি, রাঙ্গুনিয়া,
রাউজান সহ অনান্যা এলাকায় মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে ব্যাপক নৈরাজ্য তৈরী
করতে পারে শনিবার। এই টাকার পরিমান নিয়ে দুই রকমের বক্তব্য পাওয়া গেছে।
একটা সূত্র থেকে বলছে ৮০ লক্ষ, আরেকটা সূত্র থেকে বলছে ১ কোটি। এই টাকা
দেয়া হয় বাবুল চৌধুরী নামে এক ব্যাক্তির মাধ্যমে চিটাগাং নিউমার্কেটের
পাশের এক রেস্তোরায়।
হেফাজতী ইসলাম সহ সকল শরীকরা কিভাবে লং মার্চ আগাবেঃ
এইখানে লং মার্চের দুইটা প্ল্যান আছে। প্ল্যান
১ আর ২, এই দুইটা প্ল্যান পুরো সাজিয়েছে জামাত নেতা রফিক ও সেলিম।
ষড়যন্ত্রকারীরা জানে যে সরকার এই মার্চে বাঁধা দিতে পারে সে কারনে শুরু
থেকেই তারা চেয়েছে মূল ব্যাক্তি আল্লামা শফিকে তারা ঢাকায় নিয়ে আসবে এবং
এইখানে একটা জমায়েত তারা বৃহস্পতিবার [মার্চ-৪] থেকেই করবে। যদি কোন
কারনে আল্লামা শফিকে চট্রগ্রাম থেকে না আসতে দেয় তাহলে তারা ঢাকার
মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে সেন্ট্রাল ঢাকার একটা অংশে তান্ডব
চালাবে। জামাতের লোকেরাই জামাতের কিছু তরুন নেতাদের খুন করবে, কিছু
মাদ্রাসা পুড়িয়ে দিবে। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত আবদুল আলীম কে হিট করবার
জন্য তারা এরই মধ্যে পাকিস্তান থেকে স্নাইপার এনেছে। এই ঘটনাটা ঘটিয়ে দিতে
পারলেই জামাত দেখাতে পারবে যে এই ট্রাইবুনালে আটক যারা তারা নিরাপদ নয়
এবং এই বিচার পুরাই প্রহসন। চট্রগ্রামে ইনিশিয়ালী সমন্বয়কের দায়িত্ব
পালন করবে আব্দুর রহমান চৌধুরী এবং এম এ হাসেম খান। এরা দুইজনই সাকার
অত্যন্ত কাছের লোক এবং পুরা ব্যাপারটাই এরা শুরু থেকেই তদারকি করছে নিভৃতে।
হেফাজতী ইসলাম সহ সব দল বিভিন্ন এলায় মোট ১৫৬ টা টিম বানিয়েছে। এরা
বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও থানা থেকে লং মার্চের সাথে যোগ দিবে। মূলত এই দলটি
ঢাকাতে ঢুকার সাথে সাথেই এদের মধ্যে ১৫ টি ইউনিট শুরু করবে তান্ডব। খুলনাতে
একটা গ্রুপ নাস্তিক সেজে কোরান শরীফ পুড়িয়ে দিবে এবং এই ঘটনার জের ধরে
হিন্দুদের মন্দির ভাঙচুর হবে। এসবের জের ধরে ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে একদল
হানা দিয়ে পুরো কারাগারে পাগলা ঘন্টী বাজিয়ে দিবে। একাত্তর টিভি, প্রথম
আলো কার্যালয় সহ অন্যান্য ভবনে এদের একটা ইউনিট এটাক করবে বলে খবর আছে।
মীর নাছিরের ছেলে মীর হেলাল, নেপথ্যের একজন নায়ক
মূলত কি উদ্দেশ্যে এই লং মার্চ?
আসলে প্রাথমিক ভাবে এক নূরে আলম হামিদীর
অনৈতিক কার্যকলাপের জের ধরে যদিও হেফাজতী ইসলাম এই ব্যাপারটিকে তাদের উপর
আক্রমণ হিসেবে নিয়েছে পরবর্তীতে এই তথাকথিত ইসলামী দলটি টাকার কাছে বিক্রি
হয়ে যায় এবং জামাত ও সাকার পরিবার পুরো ব্যাপারটিকে একেবারেই
যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার কৌশল হিসেবেই শুধুমাত্র টাকার জোরে সব কিছু কিনে
নেয়। অতি সংক্ষেপে এই আন্দোলনকে শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার
আন্দোলনই বলা যেতে পারে, অন্য কিছু নয়।
Blogger Comment
Facebook Comment