আইপিও প্রাইসিংয়ের নিবিড় মনিটরিং চান বিশেষজ্ঞরা

বাজারে আসছে নতুন নতুন কোম্পানির আইপিও। ব্রোকার হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারিদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কঠোর অবস্থান ও নজরদরিতে বাজারে ইতিবাচক ধারা ফিরছে- এমন প্রচারণার ফলে বাজারে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার মাত্রা বেড়েছে। কিন্তু বাজারের এ শুভ যাত্রায়ও শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না বাজার-বিশেষজ্ঞ বা বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বাজারে এখন যে ধারার সূচনা হতে যাচ্ছে, তা ইতিবাচক। কিন্তু এ ধারা স্থায়ী করতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দক্ষতা ও আন্তরিকতা আরও বাড়ানো জরুরি। বিশেষ করে, আইপিও আসার এ মৌসুমে বাজারে কোনো আইপিও যেন অতিমূল্যায়িত হয়ে না প্রবেশ করতে পারে সে বিষয়ে কঠোর মনিটরিং দরকার। বিশেষজ্ঞদের কারও কারও আশঙ্কা কোনো কোনো কোম্পানি অতিমূল্যায়িত হয়ে বাজারে আসার চেষ্টা করতে পারে; যা নিবিড় মনিটরিংয়ের মাধ্যমে প্রতিহত করা না গেলে আবারও সমস্যায় পড়বে পুঁজিবাজার। কোনো কোনো কোম্পানির এমন প্রচেষ্টার খবর  নিয়ন্ত্রণ সংস্থার দৃষ্টিতে এনেছেন কেউ কেউ। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ সংস্থা শুধু বলছে, অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাজার-বিশ্লেষক প্রফেসর আবু আহমেদ দৈনিক স্টক বাংলাদেশকে বলেন, বাজারে এখন যা হচ্ছে, তাতে আশা-নিরাশার চিত্র দুটোই রয়েছে। বেশ কিছু আশার দিক দেখা দিলেও বাজার কারসাজি রোধে এখনো নিয়ন্ত্রণ সংস্থার দুর্বলতা মাঝেমধ্যেই  সামনে চলে আসছে। বিশেষ করে, কোনো কোম্পানির আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এখনো পুরোনো পদ্ধতি অনুসরন করছে। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির দেওয়া প্রসপেক্টাস দেখেই অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছে এসইসি। এতে কোনো রকম অনিয়ম বা তথ্যবিভ্রাট রয়েছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করছে না। তারা বলে যাচ্ছেন, এ দায়িত্ব তাদের নয়। তিনি বলেন, বাজারে আরও একটি ভয়াবহ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। তা হলো বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় সব মহল থেকে প্রচার করা হচ্ছে, পতনের বাজারে কিনলেই লাভ! আসলে এ বিষয়টি যে হতে পারে না, তার উদাহরণ থাকার পরও সে সত্যটি বলা হচ্ছে না। তিনি বলেন, অনেক কথা বলা যায় না। সত্য বললেই কোনো কোনো মহল থেকে বলা হয়, এরা বাজারের শত্রু।
তিনি হলেন, ২০১০ সালে বাজার ধসের আগে অনেকভাবে বহুদিন থেকেই বাজারের পতন ও অতিমূল্যায়নের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছে। তখন কখনো কখনো ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। এখন বাজার সম্পর্কে কথা বলতে অনেক বেশি সচেতন হতে হচ্ছে। কারণ, অনেক সত্য বলা যায় না। তবে এ কথা সত্য, কোনোভাবে যদি আইপিও শেয়ারগুলো এখন অতিমূল্যায়িত হয়ে বাজারে আসার সুযোগ পেয়ে যায়, তা বাজারের জন্য  শুধু খারাপ উদাহরণই সৃষ্টি করবে না, স্থায়ীভাবে বাজারের জন্য সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। 
তিনি বলেন, ২০১০ সালের ধসের আগে বাজারের বিষয়ে আকার-ইঙ্গিতে বলতে চেষ্টা করেছি। কাজ হয়নি। সরকারকে বলেছি, আপনাদের হাতে যে শেয়ারগুলো আছে, সেগুলো দ্রুত অফলোড করুন। সরকার অনেকবার প্রতিজ্ঞা করেও সে প্রতিশ্রুতি রাখেনি। তিনি বলেন, আরও একটি মারাত্মক ব্যাপার হলো, কোনো ঘটনা ঘটলে বা ঘটার সম্ভাবনার কথা বলা হলে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়। অতীতে হয়েছে, এখনো হচ্ছে। কোনো ঘটনার দায় কেউ স্বীকার করে নিতে নারাজ। এ সুযোগেই বাজারে কারসাজি হয়। এসইসি বলতে পারে না এটা দেখার দায়িত্ব তাদের নয়। তিনি বলেন, অতীতের বাজার বারবার   ব্যুরোক্রেসির দোষত্রুটির বিষয়টি ঘুরে-ফিরে এসেছে। কিন্তু তার জন্য কারও সামান্য শাস্তি হয়নি। মার্জিন লোন তথা ঋণ করে শেয়ার  কেনার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ, আইপিও প্রাইসিংগুলোকে আরও কড়াকড়ি করা, প্লেসমেন্ট বাণিজ্য সম্পর্কে শক্ত অবস্থানের কথা বলা হলেও সে সময় তা পাত্তা পায়নি। এখন ঘুরে-ফিরে তা বারবার আলোচনায় আসছে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। বাজারের যা ক্ষতি তা হয়ে গেছে। সে সময় ঢাকা স্টক একচেঞ্জের পি/ই (এক্স) মানে কোম্পানির আয়ের তুলনায় শেয়ার বেচা হয়েছেন  ৪০ গুণে। আরও তাজ্জব ব্যাপার হলো, স্বয়ং রেগুলেটর ওই মূল্যে আইপিওগুলো আসতে অনুমতি দিয়েছিল।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান মূল্য ক্রয়ের অনুকূলে এটা ঠিক নয়। কোনো কোনো শেয়ার বর্তমান মূল্যে কেনা যেতে পারে। গড়ে পি/ই=১৫ হলেই যে কিনতে হবে, এমনটি কিন্তু নয়। বর্তমানের গড় পি/ই-তেও অনেক শেয়ার অতিমূল্যায়িত। এ কথাটি শেয়ার ক্রয়ে আসা নতুন বিনিয়োগকারীদের জানানোর দায়িত্ব বাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর। তারা তা করছে না। প্রচার করা হচ্ছে, শেয়ারবাজার ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করুন; যা মোটেও যৌক্তিক নয়। কারণ, একটা কোম্পানির শুভংকরের ফাঁকিতে ভরা রিপোর্ট সাধারণ কোনো বিনিয়োগকারীর পক্ষে বুঝেশুনে শেয়ার কেনা প্রায় অসম্ভব। তাদের পক্ষে বাজারে এক ধরনের অ্যাডভাইজরি করে ব্রোকার হাউজগুলো। অনেক দিন লোকসানে থাকা হাউজগুলো এখন নিজেদের ব্যবসা বাঁচাতে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য চাতকপাখির মতো অপেক্ষা করছে। ভেতরের বাস্তবতা জানানোর চেয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা তাদের কাছে বড়। এ বিষয়ে দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার। তারা তা কতটা করছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে। তবে কোনোভাবেই অতিমূল্যায়িত হয়ে যেন কোনো আইপিও বাজারে আসতে না পারে, তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, বাজারে কোনো আইপও আসার আগে কোনো রকম কারসাজি হয়নি বা কোনো রকম তথ্যবিভ্রাট করা হয়নি তা নিশ্চিত করা জরুরি। কোম্পানিগুলোর অডিট রিপোর্ট ঠিক আছে কি না, সে রিপোর্ট কোনোভাবে অতিমূল্যায়িত হয়েছে কি না তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে। বাজারে আসার আগে কোনো হিসাব দেখার সুযোগ দায় বা অধিকার  ডিএসইর নেই। বাজারে আসার পরের বিষয়ের মনিটরিং বিষয়টি ডিএসই দেখে থাকে। তিনি বলেন, আইপিও প্রাইসিং নিয়ে কথা উঠতে শুরু করেছে। এটা ভালো। অতিমূল্যায়িত হযে হয়ে যদি কোনো কোম্পানি বাজারে আসে, তা হলে বাজারের জন্য তা অবশ্যই খারাপ হতে পারে।
Share on Google Plus

About Jessica Hornberger

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment