কবি মেহেরুননেসা থাকতেন মিরপুরের ডি ব্লকে, সাথে ছোট দুই ভার আর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে। একাত্তরের
পূর্বে বিহারী অধ্যুষিত মিরপুরে বাঙ্গালিরা ছিল সংখ্যালঘু, আর তাই
দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার বাঙ্গালিদের অত্যাচার-নির্যাতন করতো বিহারীরা। আর
এই অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে, এলাকাবাসীকে সংঘটিত করে কবি মেহেরুননেসা
এবং তার বান্ধবী কাজী রোজী একটি অ্যাকশন কমিটি গঠন করেন। যারা মিরপুরের
বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমিতির মাধ্যমে বাঙ্গালিদের অধিকার আদায় আর বিহারীদের
গঞ্জনা হতে বাঙ্গালিদের রক্ষার্থে কাজ করতো।
আর তাই সেকারণেই দীর্ঘদিন থেকে এই এলাকার বিহারীদের ক্ষোভ ছিলো তাদের প্রতি। সেসূত্রে ক্ষোভ ছিলো স্থানীয় জামায়াতীদেরও, কারণ মিরপুর এলাকার বিহারীরাই ছিলো তাদের ভোটব্যাঙ্ক। সত্তরের নির্বাচনে এই এলাকা থেকে নির্বাচন করে হারে গোলাম আযম আর তার নির্বাচনী প্রচারণায় যুবকদের সংঘটিত করে কাদের মোল্লা। ক্ষোভ থাকলেও চারিদিকে মুক্তিকামী সাধারণ জনতার দামামায় খুব একটা তাদের সাহস হয়নি কিছু করবার।
কিন্তু পঁচিশে মার্চ বদলে দেয় সকল হিসেব। নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপরে অতর্কিত আক্রমণের মাধ্যমে পাকিস্তানী বাহিনী শুরু করে এক নির্মম গণহত্যা, যে যেদিকে পারছে, পালিয়েই বাঁচছিলো কেবল। আর এই সুযোগেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সেই দালালরা আক্রমণ শুরু করে প্রগতিশীল মুক্তিকামী জনগোষ্ঠীর প্রতি।
কাজী রোজী আগেই সতর্ক করেছিলেন কবি মেহেরুননেসাকে। কিন্তু তিনি উল্টো জিজ্ঞেস করেন , দুই ভাই আর মা'কে নিয়ে কোথায় যাবো? আসলেই তো, নিজ দেশ, নিজ ভূমি ফেলে শরণার্থী হওয়া কি এতই সোজা? থেকে গিলেন তিনি তার বাড়ীতেই, কাজী রোজী তার পরিবারকে নিয়ে চলে গেলেন নিরাপদ আশ্রয়ে।
কাজী রৌজী যা আশঙ্কা করেছিলেন, হলোও ঠিক তাই। ২৭শে মার্চ সকালে, ঠিক এগারটার দিকে মীরপুরের কসাই বলে খ্যাত স্বাক্ষাত যমদূত কাদের মোল্লা হানা দেয় কবি মেহেরুননেসার বাড়ীতে,একদল বিহারীকে সাথে নিয়ে। তাদের মাথায় ছিলো লালপট্টি, মুখে নারায়ে তাকবীর, কিন্তু অন্তরে ছিলো শয়তানের হিংস্রতা। বাড়ীতে আক্রমনের খবর পেয়ে কুরআন শরীফ বুকে চেপে ধরেন মেহেরুননেসা। নাহ! তবু শেষ রক্ষা হয়নি তার, কুরআন শরীফ বুকে থাকা অবস্থায়ই তাকে হত্যা করে নরপশুরা, বাদ যায় নি তার দুই ভাই আর বৃদ্ধা মাও। শুধু হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি তারা, ধর থেকে মাথা আলাদা করে রশি দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে যায় তারা। উফ কল্পনা করে দেখুন একবার দৃশ্যটি। কী বীভৎসতা, কী নির্মমত! মা-ভাই-বোন সবাইকে একে একে নির্যাতন করে চোখের সামনে হত্যা করা। হত্যার পর মাথা কেটে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখা, এসব কি মানুষের কাজ হতে পারে?
শুধু মেহেরুননেসা নয় , এই কাদের মোল্লার নেতৃত্বেই একাত্তরের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৬টার দিকে হত্যা করা হয় আলী ও তার পরিবারকে। জবাই করা হয় আলীর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে, দু'বছরের বাচ্চাকে মারা হয় আছাড় দিয়ে। এই বীভৎসতায় ট্রাঙ্কের পেছনে এগারো বছরের কন্যা আমিনা লুকিয়া থাকা অবস্থায় আস্ফুট শব্দ করলে হত্যা করা হয় তাকেও। আর হ্যাঁ, হত্যার আগে এই এগার বছরের শিশুটিকেও একে একে বার জন গণধর্ষণ করে তাকে। বড় মেয়ে মোমেনা বেঁচে যায় এই বর্বরতা থেকে, লুকিয়ে দেখে তার চোখের সামনেই একে একে হত্যা করে হয়েছে পরিবারের আপনজনকে, ধর্ষণ করা হয়েছে ছোটবোনকেও।
অথচ হাজারো বাঙালি হত্যাকারী এই কাদের মোল্লা আর তার জামায়াতী সাঙ্গ-পাঙ্গরা আজ প্রত্যহ বলে বেড়ায় এদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই, হয়নি কোনো মুক্তিযুদ্ধ। আর আমরা তাদের এই দম্ভ দেখি চেয়ে চেয়ে, বিরক্তিকর রাজনৈতিক ব্যাপার বলে এড়িয়ে যাই আর এদিকে কবি মেহেরুননেসা আর লাখো শহীদের আত্মা কাঁদে মরে নিভৃতে।
আজ মোমেনা বিচার চায়, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিতে সে দাঁড়াচ্ছে কাঠগড়ায়, দাঁড়িয়েছেন কাজী রোজিও, প্রিয় বান্ধবী হত্যার বিচার চাইতে। তাদের সাথে আজ বিচার চায় পুরো বাংলাদেশ। সাজা চায় সেই একাত্তরের হায়েনাদের, যারা এদেশের মা-বোনদের নির্মম নির্যাতনের পর তুলে দিয়েছিলো পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে, ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে করেছে হাজারো খুন-ধর্ষণ এদেশের বাঙ্গালিদের। তাই আসুন আমর সবাই পাশে এসে দাঁড়ায় মোমেনা, কাজী রোজিদের, একতাবদ্ধ হই একাত্তরের ঘাতক-দালালদের নির্মূলে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই এদেশ থেকে ধর্মান্ধ পাকীপ্রেমিক জঙ্গীবাদী জামায়াত-শিবির দমনে।আর আপনারাই বলুন এমন নৃশংসতার জন্য কী সাজা হওয়া উচিত কাদের মোল্লার?
-------
তথ্যসূত্রঃ
প্রথম আলো (http://www.prothom-alo.com/ detail/date/2012-11-24/news/ 276573)
বিডি নিউজ (http://bdnews24.com/bangla/ details.php?cid=2&id=192861&hb= 1)
জনকন্ঠ (http:// www.dailyjanakantha.com/ news_view.php?nc=15&dd=2012-07- 11&ni=102543)
আর তাই সেকারণেই দীর্ঘদিন থেকে এই এলাকার বিহারীদের ক্ষোভ ছিলো তাদের প্রতি। সেসূত্রে ক্ষোভ ছিলো স্থানীয় জামায়াতীদেরও, কারণ মিরপুর এলাকার বিহারীরাই ছিলো তাদের ভোটব্যাঙ্ক। সত্তরের নির্বাচনে এই এলাকা থেকে নির্বাচন করে হারে গোলাম আযম আর তার নির্বাচনী প্রচারণায় যুবকদের সংঘটিত করে কাদের মোল্লা। ক্ষোভ থাকলেও চারিদিকে মুক্তিকামী সাধারণ জনতার দামামায় খুব একটা তাদের সাহস হয়নি কিছু করবার।
কিন্তু পঁচিশে মার্চ বদলে দেয় সকল হিসেব। নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপরে অতর্কিত আক্রমণের মাধ্যমে পাকিস্তানী বাহিনী শুরু করে এক নির্মম গণহত্যা, যে যেদিকে পারছে, পালিয়েই বাঁচছিলো কেবল। আর এই সুযোগেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সেই দালালরা আক্রমণ শুরু করে প্রগতিশীল মুক্তিকামী জনগোষ্ঠীর প্রতি।
কাজী রোজী আগেই সতর্ক করেছিলেন কবি মেহেরুননেসাকে। কিন্তু তিনি উল্টো জিজ্ঞেস করেন , দুই ভাই আর মা'কে নিয়ে কোথায় যাবো? আসলেই তো, নিজ দেশ, নিজ ভূমি ফেলে শরণার্থী হওয়া কি এতই সোজা? থেকে গিলেন তিনি তার বাড়ীতেই, কাজী রোজী তার পরিবারকে নিয়ে চলে গেলেন নিরাপদ আশ্রয়ে।
কাজী রৌজী যা আশঙ্কা করেছিলেন, হলোও ঠিক তাই। ২৭শে মার্চ সকালে, ঠিক এগারটার দিকে মীরপুরের কসাই বলে খ্যাত স্বাক্ষাত যমদূত কাদের মোল্লা হানা দেয় কবি মেহেরুননেসার বাড়ীতে,একদল বিহারীকে সাথে নিয়ে। তাদের মাথায় ছিলো লালপট্টি, মুখে নারায়ে তাকবীর, কিন্তু অন্তরে ছিলো শয়তানের হিংস্রতা। বাড়ীতে আক্রমনের খবর পেয়ে কুরআন শরীফ বুকে চেপে ধরেন মেহেরুননেসা। নাহ! তবু শেষ রক্ষা হয়নি তার, কুরআন শরীফ বুকে থাকা অবস্থায়ই তাকে হত্যা করে নরপশুরা, বাদ যায় নি তার দুই ভাই আর বৃদ্ধা মাও। শুধু হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি তারা, ধর থেকে মাথা আলাদা করে রশি দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে যায় তারা। উফ কল্পনা করে দেখুন একবার দৃশ্যটি। কী বীভৎসতা, কী নির্মমত! মা-ভাই-বোন সবাইকে একে একে নির্যাতন করে চোখের সামনে হত্যা করা। হত্যার পর মাথা কেটে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখা, এসব কি মানুষের কাজ হতে পারে?
শুধু মেহেরুননেসা নয় , এই কাদের মোল্লার নেতৃত্বেই একাত্তরের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৬টার দিকে হত্যা করা হয় আলী ও তার পরিবারকে। জবাই করা হয় আলীর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে, দু'বছরের বাচ্চাকে মারা হয় আছাড় দিয়ে। এই বীভৎসতায় ট্রাঙ্কের পেছনে এগারো বছরের কন্যা আমিনা লুকিয়া থাকা অবস্থায় আস্ফুট শব্দ করলে হত্যা করা হয় তাকেও। আর হ্যাঁ, হত্যার আগে এই এগার বছরের শিশুটিকেও একে একে বার জন গণধর্ষণ করে তাকে। বড় মেয়ে মোমেনা বেঁচে যায় এই বর্বরতা থেকে, লুকিয়ে দেখে তার চোখের সামনেই একে একে হত্যা করে হয়েছে পরিবারের আপনজনকে, ধর্ষণ করা হয়েছে ছোটবোনকেও।
অথচ হাজারো বাঙালি হত্যাকারী এই কাদের মোল্লা আর তার জামায়াতী সাঙ্গ-পাঙ্গরা আজ প্রত্যহ বলে বেড়ায় এদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই, হয়নি কোনো মুক্তিযুদ্ধ। আর আমরা তাদের এই দম্ভ দেখি চেয়ে চেয়ে, বিরক্তিকর রাজনৈতিক ব্যাপার বলে এড়িয়ে যাই আর এদিকে কবি মেহেরুননেসা আর লাখো শহীদের আত্মা কাঁদে মরে নিভৃতে।
আজ মোমেনা বিচার চায়, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিতে সে দাঁড়াচ্ছে কাঠগড়ায়, দাঁড়িয়েছেন কাজী রোজিও, প্রিয় বান্ধবী হত্যার বিচার চাইতে। তাদের সাথে আজ বিচার চায় পুরো বাংলাদেশ। সাজা চায় সেই একাত্তরের হায়েনাদের, যারা এদেশের মা-বোনদের নির্মম নির্যাতনের পর তুলে দিয়েছিলো পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে, ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে করেছে হাজারো খুন-ধর্ষণ এদেশের বাঙ্গালিদের। তাই আসুন আমর সবাই পাশে এসে দাঁড়ায় মোমেনা, কাজী রোজিদের, একতাবদ্ধ হই একাত্তরের ঘাতক-দালালদের নির্মূলে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই এদেশ থেকে ধর্মান্ধ পাকীপ্রেমিক জঙ্গীবাদী জামায়াত-শিবির দমনে।আর আপনারাই বলুন এমন নৃশংসতার জন্য কী সাজা হওয়া উচিত কাদের মোল্লার?
-------
তথ্যসূত্রঃ
প্রথম আলো (http://www.prothom-alo.com/
বিডি নিউজ (http://bdnews24.com/bangla/
জনকন্ঠ (http://
Blogger Comment
Facebook Comment