প্লেসমেন্টের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করা কম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে দুটি কম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ছাড়ার অনুমোদন পেয়েছে অথবা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এসব কম্পানির আইপিও বাজারে এলে সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ারের ঘাটতি কিছুটা পূরণ হবে, সেই সঙ্গে লেনদেনে যোগ হবে প্লেসমেন্ট শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আটকে থাকা প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তবে অনুমোদন দেওয়ার সময় প্রিমিয়াম বাবদ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা রাখার দাবি জানান বাজারসংশ্লিষ্টরা। পুঁজিবাজারে দুই কোটি পাঁচ লাখ শেয়ার ছেড়ে মোট ৮২ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জিবিবি পাওয়ারকে গত ১৮ অক্টোবর আইপিও অনুমোদন দেয় এসইসি। আইপিওর মাধ্যমে বিক্রির জন্য কম্পানির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারে ৩০ টাকা প্রিমিয়ামসহ মোট ৪০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। গত ১৮ অক্টোবরে এর আইপিও অনুমোদন দেয়। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লাইসেন্স নবায়ন নিয়ে জটিলতার কারণে ১৮ ডিসেম্বর তা স্থগিত করে দেয় এসইসি। ৭০ টাকা দরে শেয়ার বরাদ্দ দিয়ে মূলধন সংগ্রহ করেছিল জিবিবি পাওয়ার। এখন আইপিওতে ৪০ টাকা করে শেয়ার বরাদ্দের অনুমোদন পেয়েছে এ কম্পানি। প্রিমিয়ামের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নেওয়া শেয়ারপ্রতি অতিরিক্ত ৩০ টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা রাখেনি অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ। ১১৫ টাকা দরে আইপিও বাজারে ছাড়তে চেয়ে এসইসির কাছে আবেদন করেছে ইউনিক হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস। প্লেসমেন্টের মাধ্যমে মোট তিন কোটি শেয়ার বিক্রি করে ৪৮০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। কম্পানিটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ১৫০ টাকা প্রিমিয়ামসহ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তখন মোট ১৬০ টাকা নেওয়া হয়েছিল।
প্লেসমেন্টের মাধ্যমে শেয়ার বরাদ্দ করা দুটি কম্পানি আইপিও প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলেও এখনো বিনিয়োগকারীদের বিপুল টাকা আটকে রয়েছে প্লেসমেন্ট শেয়ারে। সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে টাকা তুলে নিয়ে এসব প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনেছিলেন বিনিয়োগকারীরা।বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্লেসমেন্ট বরাদ্দ দেওয়া যেসব কম্পানি প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে পুঁজিবাজারে আসতে পারবে, সেগুলোর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। আর তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়া না হলেও বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা উচিত। এতে বিনিয়োগকারীরা যেমন হয়রানি থেকে মুক্তি পাবেন, তেমনি আটকে থাকা অর্থ শেয়ারবাজারে ফিরলে বর্তমান মন্দা কাটাতে সহায়ক হবে। ২০০৯ ও ২০১০ সালে সেকেন্ডারি মার্কেট যখন তুঙ্গে, তখন উচ্চ প্রিমিয়ামে শেয়ার বিক্রি করে সাতটি কম্পানি। এর মধ্যে অরিয়ন ফার্মা লিমিটেড প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সাত কোটি শেয়ার বিক্রি করে ৫২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। কম্পানির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের জন্য ৬৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ মোট ৭৫ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ছয় কোটি শেয়ার বিক্রি করে ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে জিএমজি এয়ারলাইনস। কম্পানিটি শেয়ারপ্রতি প্রিমিয়াম নিয়েছে ৪০ টাকা। ১০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে ২৪০ টাকা প্রিমিয়ামসহ সর্বমোট ১২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ। এই কম্পানিটি প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ৫০ লাখ শেয়ার বিক্রি করেছে। এনার্জি প্রিমা নামে একটি কম্পানি এক কোটি ৫৬ লাখ শেয়ার বিক্রি করে ১৫৫ কোটি ১০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে। কম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে প্রিমিয়াম নিয়েছে ৮৯ দশমিক ৪২ টাকা। এসটিএস হোল্ডিংস (এ্যাপোলো হসপিটাল) আট কোটি ৬৯ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার বিক্রি করে ১৩০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে। এই কম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে শেয়ারপ্রতি পাঁচ টাকা প্রিমিয়াম নিয়েছে। এ ছাড়া কেয়া কটন মিলস ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে সমপরিমাণ প্রিমিয়ামসহ ৬০ লাখ শেয়ার ছেড়ে ১২ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। অতিরিক্ত প্রিমিয়াম নির্ধারণ করায় ইতিমধ্যে এসটিএস হোল্ডিংসের আবেদন বাতিল করেছে এসইসি। আর প্রায় দেড় বছর আগে আবেদন করলেও এসইসির অনুমোদন পায়নি লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ। ব্রোকারেজ হাউসের তালিকাভুক্তির বিষয়ে বাজারসংশ্লিষ্টদের প্রবল আপত্তি থাকায় এই প্রতিষ্ঠানের আইপিও পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে এসব কম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ারধারীরা লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি কম্পানি এসইসির কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিপুল শেয়ার বিক্রি করেছে। অনেক ক্ষেত্রে আইপিওতে আসার আশ্বাস দিয়ে কম্পানির পরিচালকরা তাঁদের শেয়ার আগাম বিক্রি করে দিয়েছেন। প্লেসমেন্ট নিয়ে কোনো নীতিমালা ছিল না আগে। তাই এ ব্যাপারে এসইসির কোনো ভূমিকা নেই বলে জানান এসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, কম্পানিকে মূলধন সংগ্রহের অনুমোদন দিয়েছে এসইসি। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় তারা সেটা সংগ্রহ করবে_সেটা কম্পানির বিষয়। প্লেসমেন্টের মাধ্যমে কম্পানি যে শেয়ার বিক্রি করেছে, তার চেয়ে কম মূল্যে আইপিওর অনুমোদন পেলে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি মীমাংসা করবে কম্পানি ও বিনিয়োগকারী। পুনর্গঠিত এসইসিতে অনুমোদিত প্লেসমেন্ট নীতিমালা অনুযায়ী কোনো কম্পানি ফেসভ্যালুর তিন গুণের বেশি প্রিমিয়াম ধার্য করতে পারবে না। এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সভাপতি শাকিল রিজভী কালের কণ্ঠকে বলেন, প্লেসমেন্ট শেয়ারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিপুল টাকা আটকে আছে। এ বিষয়ে সব রকম জটিলতা নিরসন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের মুক্ত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে উদ্যোগী হতে হবে। কোনো কম্পানির শেয়ারের ন্যায্য মূল্য কত হওয়া উচিত, তা নির্ধারণ করে আইপিওতে আসার সুযোগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্লেসমেন্টের সময় নেওয়া অতিরিক্ত প্রিমিয়ামের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। আর কোনো কম্পানি যদি নির্ধারিত মূল্যে বাজারে আসতে অনাগ্রহী হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের সব টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সূত্র: কালের কন্ঠ, ২২ ডিসেম্বর ২০১১
Blogger Comment
Facebook Comment